my.anandabazar.com
কার্টুনে প্রতিবাদ
তনিমা চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৩
প্রতিবাদ বিষয়টাকে আমরা মারামারি ধড়পাকড়ের বাইরেও নানাভাবে পেয়েছি নীরব ভঙ্গিমায়। কখনো তা প্রতিধ্বনিত হয়েছে গীতিকারের শব্দ-সুরের সমন্বয়ে, কখনও তার প্রতিফলন শিল্পীর ক্যানভাসে রঙের খেলায়। অথবা সে আছে বাক্য-ছন্দ সংযোজনায় কবির কলমে। কিন্তু প্রতিবাদ শব্দটাকে সঙ্গে রেখেই তার সঙ্গে চিত্রণ জুড়ে ‘চিত্র-শব্দ’ মেলবন্ধন থেকে যে প্রতিবাদকে ফুটিয়ে তোলা যায় অপার শিল্পের আঙিনায়, তা চোখে না দেখলে হয়তো সত্যিই বোঝা যেত না। সম্প্রতি ‘অকাদেমি অফ ফাইন আর্টস’-এর শংসাপত্রে ভূষিত আর্টিস্ট শুভেন্দু সরকার করে দেখালেন সেই কাজটিই। আর্টপেপারের ওপর লাল মার্কার পেন-এ ইংরেজিতে লেখা ‘প্রোটেস্ট’ শব্দটিকে না মুছে তাতেই এলোমেলো আঁকিবুকিতে কার্টুন চরিত্রের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুললেন সময়ের ধারাভাষ্যে তাঁর প্রতিবাদ।
শুভেন্দুর কাছে তাঁর চরিত্রগুলো-ই যেন ঝান্ডা হাতে কোনো কিছুর বিরুদ্ধে
জানাচ্ছে তাদের ‘প্রোটেস্ট’। শুধু সন্ত্রাস নয়, এই শব্দগুলোকে সঙ্গে রেখে
দ্রুত আঁচড়ে শুভেন্দু ছবি তৈরি করেন। তাই বলাই যায়, সাদামাটা কিছু শব্দ,
যেমন আকাশকুসুম, গ্যাঁড়াকলেও তাঁর শিল্পের পরশমণিতে থাকে শব্দের অনুরূপ
কিছু অপরূপ চিত্রভাষা। এক ঘন্টার এক আর্ট পারফরম্যান্সে যা আয়োজিত হয়েছিল
১৭ জানুয়ারি কলেজ স্ট্রিট কফিহাউসে।
কলকাতা আর্ট কলেজ থেকে অঙ্কনের পাঠ শুভেন্দুর। মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবার
থেকে উঠে আসা এই শিল্পী দিল্লি ললিত কলা অকাদেমি, বিড়লা অকাদেমি, ফাইন
আর্টস অকাদেমিতে গ্রুপ আর্ট শো তে অংশ নেন। আর্টিস্ট অনিতা রায়চৌধুরী’র
সঙ্গে কলকাতা আর্ট সার্কেল গ্যালারিতে যেমন প্রদর্শনী করেছেন, তেমন কলকাতা
আর্ট কলেজ, অকাদেমি অফ ফাইন আর্টস, বিড়লা অকাদেমি, রাজ্য চারুকলা পর্ষদ
প্রভৃতি বহু জায়গায় বহুবার হয়েছে তাঁর ছবির প্রদর্শনী। তবে এই সবকিছুর
বাইরে ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রক থেকে ন্যাশানাল স্কলারশিপ প্রাপ্ত এই
শিল্পী ভালবাসার বিনিসুতি মালা গেঁথেছেন আঁকা’-র সঙ্গে বহুকাল আগেই। তাই
হয়তো অঙ্কন-কে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার পাশাপাশি নিজের মনের ভাব বাসনা
ইচ্ছাকে প্রকাশ করতে নির্ভর করেছেন সেই শিল্পসত্তার ওপর। বর্তমান সময় এবং
চারপাশে ঘটে চলা বিশৃঙ্খলা ও অঘটন এই শিল্পীকে ভাবিয়েছে বারবার।
এই শহরে শিল্প, আঁকা সম্পর্কে সাধারণের মধ্যে অনুভবের অভাব উপলব্ধি করে শুধুমাত্র বহুমূল্যে ছবি বিক্রির আঙ্কিক দেনাপাওনার বাইরে শুভেন্দু চেয়েছেন জনগণের মাঝে উপস্থিত থেকে ছবি আঁকতে। শিল্পীর নিজের কথায়, তাৎক্ষণিকতার মিশেলে আঁকাকে সকলের বোধগম্য ও ভাললাগার করে তুলতে কফিহাউসের মতো বহু সমাগমে ভরা জায়গায় আর্ট পারফরম্যান্স করার সিদ্ধান্ত তাঁর। শেষ বেলার শীতে ভরা কফিহাউসে শুভেন্দুর ছবি নিয়ে মাতামাতি দেখে এমনটাও মনে হয়, কার্টুন বললেই সবার আগে মাথায় আসে যে ব্যঞ্জনা, সেই ধারণার বাইরে গিয়ে কার্টুনের নিজস্ব রসবোধকে পূর্ণমাত্রা দিতেই যেন শিল্পীর এই শিল্পের অঙ্গনে আসা, এবং জয় করা।